PopUp

Tuesday, September 12, 2017

★উপলব্ধি★


★উপলব্ধি★

খেলাটার ক্লাইম্যাক্সে এসে পৌঁছেছে অর্ক। চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাতের ধারাভাষ্যের মত বলতে হয়, 'টানটান উত্তেজনা'। অর্কের মেজাজটা বিগড়ে গেল। কে যেন কলিংবেল বাজাচ্ছে। আম্মুটাও যেন কেমন। উঠে দরজা খোলার নাম গন্ধ নেই। ফিসফিস করে ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে। এদিকে যে কলিংবেল টিপছে, সে খুবই অস্থির হয়ে আছে। যেন অন্ধকার কূপের মধ্যে পড়ে গেছে। অর্ক ভাবতে লাগল, এমন সময় কে আসতে পারে। আব্বু আসে রাত দশটার দিকে। তখন টিভিতে টম&জেরি কার্টুন হয়। এখন কে আসতে পারে? অর্ক কম্পিউটারের মনিটরের থেকে চোখ না ফিরিয়ে বলল, আম্মু প্লিজ, দরজাটা খোল।
না, আম্মুর উঠার নামগন্ধ নেই। অগত্যা অর্কেরই উঠতে হল।
দরজার পিপ হোলটা একটু উপরে। অর্ক একটা চেয়ার টেনে পিপ হোল দিয়ে তাকাল। আব্বু এসেছে। দরজা খুলে এক লাফে তপুর কোলে উঠে গেল অর্ক।
-আমার সুপারম্যান।
-আব্বু, গুড ইভনিং।
-গুড ইভনিং মাই সন। কী করছিলে?
-গেম খেলছিলাম।
-আম্মু কোথায়?
-ঘরে আছে।
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বাপবেটার কথোপকথন চলছিল। তনু কোলবালিশে পা তুলে শুয়ে ফোনে কথা বলছিল। তপু ঘরে প্রবেশ করার সাথে সাথে ফোনটা কানের উপর থেকে নামিয়ে রাখল।
-কী ব্যাপার, আজ এত আগে এলে যে?
-এমনিতেই। অফিসে কাজ শেষ, তাই চলে এলাম।
-একবার ফোন দিতে পারতে। যাইহোক, ফ্রেশ হও। আমি বাথরুমে টাওয়েল আর গরম পানি দিয়ে আসছি।
-আচ্ছা।
অর্ক তপুর কাছে এসে বলল, আব্বু, একটা হেল্প করবে?
-লেভেল পার করে দিতে হবে?
মুখটা ভার করে অর্ক বলল, হুম। অনেকবার ট্রাই করলাম বাট পারলাম না।
-লেভেল পার করে দিলে আমাকে কী দিবে?
-দুইটা পাপ্পি দেব।
-ওকে।
তপু একবারেই লেভেলটা পার হল। অর্ক তপুকে জড়িয়ে ধরে বলল, থ্যাংক ইউ আব্বু। উম্মা।
-ওয়েলকাম মাই সন।
তনু এসে বলল, যাও। বাথরুমে পানি দিয়ে এসেছি।
তপু উঠে গেল। তনু অর্ককে ধমক দিয়ে বলল, অনেক গেম খেলা হয়েছে। পড়তে বস।
অর্কের মনটা খারাপ হয়ে গেল। আম্মু ইদানীং কেমন যেন হয়ে গেছে। ভালভাবে কথা বলে না। আব্বু বলে। অর্ক বলল, আব্বু গোসল করে আসার পর পড়তে বসব।
তনু দ্বিতীয় কথা বলল না। ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল। দুই মিনিটের মাথায় ফিরে এসে ফোনটা অফ করে রেখে দিল।
তপু বাথরুম থেকে বেরিয়েছে। ফ্রেশ লাগছে এখন। ওদের বাসাটা দক্ষিনমুখী। একটা শীতল বাতাসের প্রবাহ হতেই থাকে। তনু শুয়ে পড়েছে। সবেমাত্র সাড়ে সাতটা বাজে। এখন ডিনার করাও সম্ভব না। অর্কের পড়া শেষ হলে খেতে বসবে। অর্ককে পড়াতে হবে।
-আব্বু, আমার ম্যাথগুলো করে দাও।
-কাল শুক্রবার না? আজ থাক। তুমি গেম খেল।
-থ্যাঙ্ক ইউ আব্বু।
তপু বারান্দায় এসে বসেছে। এইমুহূর্তে হাতে এক কাপ চা হলে মন্দ হয় না। তনুকে ডেকে বলল, তনু, চা খাওয়াতে পারবে?
তনু কোন জবাব দিল না। তপু নিজেই কিচেনে গেল। সে ভালই চা বানাতে পারে। চা বানিয়ে দুজনে একসাথে খাওয়া যাবে। ব্যাপারটা মন্দ হবে না।
কিচেনের সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো। বিয়ের পর তনু খুবই গোছালো স্বভাবের ছিল কিন্তু ইদানীং কেমন যেন অগোছালো হয়ে গেছে। কিচেনে লাইটার খুঁজে না পেয়ে নিজের লাইটারটা নিয়ে এল।
চুলায় পানি টগবগ করে ফুটছে। চা পাতা এখন দিয়ে দিতে হবে। এবং সাথে সাথে নামিয়ে ফেলতে হবে। চা পাতা বেশি সিদ্ধ হলে র চায়ের স্বাদ ঠিক থাকে না। নিজের চায়ে চিনি কম দিল আর তনুর জন্য চিনি বেশি দিয়ে চা বানাল।
চা বানানো শেষে কেতলি পড়ে গেল মেঝেতে। ঝনঝন শব্দ শুনতে পেল তনু। উঠে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে।
-সরি, কেতলিটা পড়ে গেল। খেয়াল করিনি।
-আমাকে ডাকতে পারতে।
-ডেকেছিলাম। আর দেখলাম তুমি শুয়ে পড়েছ। ভাবলাম তোমার শরীর খারাপ। তোমার জন্যও চা বানিয়েছি। চল, বারান্দায় বসে চা খাই।
কেমন একটা অনিচ্ছায় তনু বারান্দায় এসে তপুর সাথে বসেছে। বারান্দায় ডিম লাইট জ্বালানো। অল্প আলোয় তনুর বিষণ্ণ মুখটা তপু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।
-তনু, তোমার কী হয়েছে?
তনু বোধহয় শুনতে পায়নি। সে জানালার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
-এই তনু!
তনু চমকে উঠল।
-কী হয়েছে তোমার?
-কিছু না।
-বেশকিছু দিন যাবৎ তুমি কেমন যেন হয়ে গেছ। এনিথিং রং?
-নাথিং।
-ওহ, চা কেমন হয়েছে?
-চিনি দাওনি কেন?
-ওহ হো। আমারটা তোমার কাছে, তোমারটা আমার কাছে চলে এসেছে। এঁটো করে ফেলেছি। খাবে?
-দাও।
-আচ্ছা, তোমার মোবাইলে কল ওয়েটিং সার্ভিসটা অন করো। প্রায়ই ফোন বিজি পাই। ইমার্জেন্সী কেউ ফোন করে তোমাকে যদি না পায় তাহলে....
-তুমি কিভাবে জানলে আমার ফোন বিজি থাকে?
-আমি জানব না? দিনে কম হলেও দশবার ফোন দেই। আজ অফিস থেকে আসার আগেও ফোন দিলাম কিন্তু... আর তুমি অভিযোগ করলে কেন ফোন দিয়ে আসলাম না।
তনু চুপচাপ হয়ে গেল। চা শেষ। তপু সিগারেট ধরালো। বাতাসে সিগারেটের ধোঁয়া তনুর দিকে যাচ্ছে।
-এই, ধোঁয়ায় তোমার সমস্যা হলে ঘুরে বস।
-না, সমস্যা নাই। সাত বছর ধরে সহ্য করছি।
-সাত বছরে কিন্তু আর সহ্যের মধ্যে থাকে না, অভ্যাস হয়ে যায়। তুমি কি অভ্যস্ত হও নি?
তনু জবাব দিল না। তপু সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে আধখাওয়া সিগারেট ফেলে দিয়ে বলল, আমি কিন্তু তোমার বর্তমান আচরণেত সাথে অভ্যস্ত না।
-কেমন?
-এইযে তুমি অগোছালো হয়ে গেছ, তুমি এমন ছিলে না। এমন ভাবগাম্ভীর্য ছিল না তোমার মধ্যে। তোমার কোন সমস্যা থাকলে আমাকেই তোমার বলা উচিৎ।
-কোন সমস্যা নাই।
-সমস্যা না থাকলে ভাল। যাও, ডিনার রেডি কর। খেয়ে নিই।
তনু হ্যাঁ না কিছু না বলে উঠে গেল। দশমিনিট পর ডাকল, খাবার রেডি। আস।
তপু আর অর্ক পাশাপাশি বসেছে আর তনু ওদের সামনের চেয়ারে। খাবারের মেনু গরুর মাংস, চিংড়িমাছ। তপু গরুর মাংস খুব পছন্দ করে। তনু তপুর প্লেটে মাংস তুলে দিল।
-কী ব্যাপার? তুমি খাবে না?
-না, খিদে নেই।
-এটা কেমন কথা? ডিনার না করলে রাতে তোমার ঘুম হয় না। দিনেও তো.....
কথা না বাড়িয়ে তনু প্লেটে এক চামচ ভাত আর চিংড়িমাছের তরকারি নিল। অর্ক কথা বলছে না। খাবার টেবিলে কথা বলা আম্মু পছন্দ করে না। তারপরও সে তপুর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, আব্বু, আরেকটা চিংড়িমাছ নিব।
-এই, অর্কের প্লেটে চিংড়িমাছ দাও।
-তোমার কানের কাছে বলা লাগবে কেন? আমাকে বললে কি দিব না?
-ব্যাপারটা ঠিক তা নয় তনু। তুমি ওর সাথে আরেকটু নরম সুরে কথা বলতে পার। ও তোমাকে ভয় পায়।
-আমাকে ভয় পায় মানে? আমি বাঘ নাকি ভাল্লুক?
-মানুষ বাঘ ভাল্লুকের চেয়ে মানুষকেই বেশি ভয় পায়।
অর্ক খাওয়া শেষ করে হাত উঁচু করে বসে আছে। আব্বুর খাওয়া শেষ হলে একসাথে বেসিনে গিয়ে হাত ধোবে।
পিঠের নিচে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে বসে আছে তপু। হাতে টিভির রিমোট। চ্যানেল ঘুরাচ্ছে শুধু। তনু আগে এই সময় সিরিয়াল দেখত। কিন্তু ইদানীং সে টিভিই দেখে না। একটা চ্যানেলে রবীন্দ্রসঙ্গীত হচ্ছে,
আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে
ভোরের আলো মেঘের ফাঁকে ফাঁকে
পিছু ডাকে, পিছু ডাকে.....
গান শুনতে শুনতে তপু ঘুমিয়ে পড়ল। তনু ঘুমায়নি। মাঝরাতে একবার উঠে বারান্দায় গেল। নেটওয়ার্ক খুব ডিস্টার্ব করছে, ঠিকমতো কথা বোঝা যাচ্ছে না।
সকালবেলা তপু উঠে কিচেনে গিয়েছে। আজ অর্কও আগেভাগে ঘুম থেকে জেগেছে। ছুটির দিনে তার ঘুম ভেঙে যায় কিন্তু স্কুল যেদিন খোলা থাকে, ঘুম থেকে উঠতেই মন চায় না। সে তপুর সাথে কিচেনে আছে।
-আব্বু, আজ তুমি ব্রেকফাস্ট রেডি করবে?
-হুম। 
-কী রান্না করবে?
-পরোটা বানাব আর গতরাতের গরুর মাংসটা গরম করব। চলবে?
-হুম। বাবা, আম্মুকে ডাকি?
-না, থাক। তোমার আম্মুর রাতে ঘুম হয় না। তাই দিনে একটু ঘুমাক।
-আচ্ছা।
ব্রেকফাস্ট রেডি করে তপু তনুকে ডাকল। সে উঠে ফ্রেশ হয়ে একসাথে ব্রেকফাস্ট করল। কোনকিছু বলছে না।
-তনু, চল। আজ ঘুরে আসি।
-কোথায়?
-যেখানে যেতে চাও।
-না, থাক। আমি যাব না। তুমি বরং অর্ককে নিয়ে বেড়িয়ে আসো।
-ওকে। তবে, গেলে তোমার ভাল লাগত।
তনু জবাব না দিয়ে উঠে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। কোলবালিশে এক পা তুলে কাত হয়ে শুয়ে আছে। তপু আর অর্ক বের হয়ে গেছে।
-আব্বু, কোথায় যাব?
-বল তো, কোথায় যেতে পারি?
-চিড়িয়াখানা?
-হুম, ইউ আর ভেরি ইন্টেলিজেন্ট।
-থ্যাঙ্ক ইউ আব্বু।
চিড়িয়াখানায় ঢুকে তারা বিভিন্ন পশুপাখি দেখছে। বানরের খাচার সামনে থেকে অর্ক নড়ছে না। ওদের কর্মকাণ্ডে সে খুব মজা পাচ্ছে। ঘুরাঘুরি করে রেস্টুরেন্টে গেল।
-কী খাবে অর্ক?
-পিৎজা।
-ওকে।
তপু অর্ডার করল। ওর খেতে ইচ্ছে করছে না। একটা কোল্ড ড্রিংক নিয়ে তাতে চুমুক দিচ্ছে। অর্ক পিৎজা খেয়ে শেষ করেছে। ফাস্টফুড সে খুব পছন্দ করে কিন্তু ঘরের খাবার খেতে চায় না।
-আব্বু, একটা কথা বলব?
তপু অবাক হয়ে তাকালো অর্কের দিকে। তার কণ্ঠ চেঞ্জ হয়ে কেমন পরিণত বয়সী মনে হচ্ছে।
-কী? বল।
-আম্মু কেমন যেন চেঞ্জ হয়ে গেছে।
-কী রকম?
-আগে অনেক কেয়ার করত কিন্তু এখন করে না।
-তোমার আম্মু কোন মানসিক চাপে আছে হয়তো। ঠিক হয়ে গেলে আবার তোমার কেয়ার করবে। তোমাকে একটা প্রশ্ন করি, তুমি কাকে বেশি ভালবাস?
অর্ক একটু ভেবে বলল, আম্মুকে।
বাসায় আসতে আসতে দুপুর হয়ে গেছে। খাওয়াদাওয়া করে একটা ঘুম দিল তপু। ছাড়াছাড়া একটা স্বপ্ন দেখল সে। যে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা যায় না।
পরদিন অফিসে তপুর ফোন এল অর্কের স্কুল থেকে।
-মি. তপু বলছেন?
-জ্বি।
-অর্ককে নিতে আসবে না কেউ?
-কেন? ওর আম্মু যায়নি?
-না।
-আচ্ছা, আমি এক্ষুণি আসছি।
তপু অফিস থেকে দ্রুত বের হয়ে গেল। স্কুল পুরোটাই ফাঁকা। শুধু কয়েকজন টিচার আছে।
তপু অর্ককে নিয়ে সরাসরি বাসায় চলে এল। তাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। বাসায় তনু নেই। ফোন দিলে রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। শেষ বিকেলে তনু বাসায় এল। ঘরে ঢোকার আগমুহূর্তে সে কারও সাথে ফোনে কথা বলছিল।
-তোমাকে খুব ক্লান্ত লাগছে। দুপুরে নিশ্চয় খাওয়া হয়নি, যাও। ফ্রেশ হয়ে নাও।
তনু কোন কথা বলল না। গোসল করে এসে দেখে তপু বারান্দায় ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে সিগারেট টানছে।
-খাবে না?
-আমি খেয়ে এসেছি।
-ওকে। ফ্লাস্কে চা রাখা আছে। আমার আর তোমার জন্য চা নিয়ে আস। চা খেতে খেতে কথা বলি।
তনু চা নিয়ে এসে বসেছে। তনুর চূলগুলো ভেজা। মুখের উপর একগোছা চুল পড়ে আছে। গোসলের পর চেহারায় কেমন একটা স্নিগ্ধতা আসে যা গরম চায়ের চেয়ে সুমধুর।
-অধিকার ফলাবো না, জানতে চাচ্ছি, কোথায় গিয়েছিলে?
-এক ফ্রেন্ডের বাসায়।
-অর্ককে তোমার আনতে যাওয়ার কথা। যেতে পারবে না- আমাকে বললেই পারতে।
-খেয়াল ছিল না।
-বাহ, তুমি একজন মা, সন্তানের কথা খেয়াল থাকে না।
-আসলে আমি......
-চুপ। একদম চুপ।
তপু খুব জোরে ধমক দিল। এতদিনের সংসার জীবনে তপু এমন আচরণ কখনো করেনি।
-তুমি আমাকে কী ভাব? বোকা? কিছুই বুঝি না? তুমি তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের সাথে যেদিন থেকে যোগাযোগ শুরু করেছ, আমি জানি।
-তুমি কিভাবে জান?
-বললাম তো, আমাকে বোকা না ভাবলে খুশি হব। জেনেও আমি চুপ থেকেছি। কিছুই বলিনি। ভেবেছিলাম, তুমি নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারবে। কিন্তু.... আচ্ছা, একটা কথা বল তো, আমি কি তোমাকে ভালবাসি না?
তনু চুপ করে আছে। কিছুক্ষণ পর বলতে শুরু করল, তপু, আমি তোমাকে ভালবাসি কি না জানি না। কিন্তু ইদানীং আমার মনে তোমার স্থান নেই। আমার মনে অন্য কেউ আছে। আমি জানি, এটা ভুল। কিন্তু মাঝেমাঝে ইচ্ছে করেই ভুল করতে হয়। এভাবে আমাদের সংসার চলবে না। আমি তোমাকে ছাড়তে চাচ্ছি।
-তুমি আমার সাথে থাকতে চাচ্ছ না? যদি না চাও, তাহলে চলে যেতে পার। যেতে চাইলে কাউকে ধরে রাখা যায় না। আর আমি ধরে রাখার চেষ্টা করব না। কারণ তুমি কোন ষোড়শী নও, চব্বিশ বছরের যুবতি নারী। যার স্বামী আছে, সংসার আছে, আর সাত বছরের একটা ছেলে আছে, তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা যায় না। তবে একটা কথা বলি।
তপু চায়ের কাপ মেঝেতে ফেল দিল। কাপটা টুকরোটুকরো হয়ে গেছে।
-তনু, চাইলে আমরা ভাঙতে পারি, কিন্তু চাইলেই আগের মত জোড়া লাগাতে পারি না। তুমি কিছু সময় নাও ভাবার জন্য।
তপু চলে গেল ঘর থেকে। কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কোথায় যেতে ইচ্ছে করছে সে বুঝতে পারছে না।
রাত এগারোটার দিকে তপু বাসায় ফিরল। এরমধ্যে তনু একবারও তাকে ফোন দেয়নি। অর্ক ঘুমিয়ে পড়েছে।
-তপু, কিছু কথা ছিল।
-এখন শুনতে ইচ্ছে করছে না।
-শুনতে ইচ্ছে না করলেও তোমার শুনতে হবে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।
তপু অসহায় দৃষ্টিতে তনুর দিকে তাকালো। তনু বলছে, আমি আমাদের এই সংসার জীবনের স্মৃতির পাতাগুলো উল্টেপাল্টে দেখলাম। আসলে ব্যাপারটা কি জান, তুমি আমাকে অনেক ভালবাস, কিন্তু কখনো আমার ভুলগুলো শুধরে দাওনি। আমি ভুল করেছি, এটা আমার অপরাধ। কিন্তু তুমি ভুল সহ্য করেছ, এটা কি অপরাধ নয়? আমি কোন মিথ্যে মায়ার পিছনে ছুটেছি। আমাকে কি আরেকবার সুযোগ দেওয়া যায় না তোমার ভালবাসাকে শ্রদ্ধা জানানোর? ক্ষমা করা যায় না?
-ভালবাসার মানুষকে ক্ষমা করা যায় না, তাকে শুধু ভালবাসাই যায়। 
তপু তনুকে জড়িয়ে ধরেছে। দুজনেই নীরব। কিন্তু কথা বলছে দুজনের চোখের জল।
অর্কের ঘুম ভেঙে গেছে। সে তার আব্বু-আম্মুর রুমে এসে চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে আছে। সে এমন মুহূর্ত আগে সম্ভবত দেখেনি।
-আব্বু!
তপু কেন যেন একটু লজ্জা পেল। লজ্জা কাটিয়ে বলল, মাই সুপারম্যান, কাম অন।
অর্ক এক লাফে তপুর কোলে উঠে গেল।

0 comments:

Post a Comment