PopUp

Saturday, September 9, 2017

৬৬৫ দিনের মহাকাশ ভ্রমণ শেষে পৃথিবীতে ফিরে নাসা’র নারী নভোচারীর রেকর্ড!


বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই ? আশা করি ভালো। আজ কথা বলবো পৃথিবীর বাইরের কিছু বিষয় নিয়ে। অর্থাৎ মহাকাশ নিয়ে। বিশেষ করে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি খবর নিয়ে। তার আগে এ বিষয়ে কিছু কথা বলে নেয়া ভাল।
মহাকাশের প্রতি আগ্রহ মানুষের বহু দিনের। ১৬১০ সালে সর্বপ্রথম গ্যালিলিও একটা টেলিস্কোপ বানিয়েছিলেন রাতের আকাশে তারা দেখার জন্য। সেটা দেখা পর্যন্তই থেমে থাকেনি। মানুষের ইচ্ছা হয়েছে সেখানে যাবার। কিন্তু আফসোস! তখনকার প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল না। কিন্তু তাই বলে মানুষ কি বসে থাকবে? থাকেনি।
১৮৬৫ সালে ফরাসি লেখক জুল ভার্ন প্রকাশ করে ফেললেন সায়েন্স ফিকশান 'ফ্রম দ্যা আর্থ টু দ্যা মুন'। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেল। মানুষের স্বপ্নগুলো বাড়তে লাগলো। বলে রাখা ভাল যে জুল ভার্ন কিন্তু একজন স্বপ্নবিলাসী লেখক ছিলেন। 'অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ' লিখে মানুষের স্বপ্নগুলোকে তিনিই দীর্ঘায়িত করেছিলেন।
এরপর মানুষ যখন প্রযুক্তির ব্যবহার শিখলো, তখন একে একে মহাকাশে পাঠানো হলো মাছি, ইঁদুর, কুকুর, ব্যাঙ, বানর ইত্যাদি। এছাড়াও কেঁচো, মাকড়সা, পিঁপড়া, মৌমাছি, মাছও পাঠানো হয় মহাকাশে। ব্যাপারটা কেমন না? মানুষের আগে মহাকাশ জয় করেছে সামান্য একটা মাছি বা বানর!
জীবজন্তু পাঠিয়ে মহাকাশের আবহাওয়া বা পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা লাভ করার পর  ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো মানুষ পাঠানো হয় মহাকাশে। মহাকাশের প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন। কিন্তু মহিলারা বসে থাকবে কেনো। তারাও মহাকাশে যাবে।
ঠিক দু'বছরের ব্যবধানে ১৬ জুন, ১৯৬৩ সালে মহাকাশ ভ্রমণ করেন একজন নারী, ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। এরপর ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চাঁদ পর্যন্ত জয় করলো মানুষ। নিল আর্মস্ট্রং-এর স্বপ্নালু সেই লাইনটা মানুষকে আরো স্বপ্নবিলাসী করে তুললো।







                               নাসা'র নভোচারী পেগি হুইটসন স্পেসওয়াক-এর সময়।
যারা The Martian (2015) সায়েন্স ফিকশান মুভিটা দেখেছেন তারা জানেন যে, হ্যাঁ মানুষ এখন অন্যান্য গ্রহে বসবাসের স্বপ্নও দেখছে। সেই মুভিতে দেখানো হয় প্রতিকূল পরিবেশ থেকে বেঁচে কীভাবে একজন মঙ্গল গ্রহে আলু চাষ করে। হ্যাঁ, কালক্রমে এভাবেই মানুষ সবকিছু জয় করে যাচ্ছে।
এবার আসি সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে। মার্কিন নভোচারী পেগি হুইটসন এক দুঃসাহসিক মহাকাশ যাত্রা পাড়ি দিয়ে গত শনিবার পৃথিবীতে অবতরণ করে রেকর্ড তৈরি করেছেন।  আর এটি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার প্রথম কোনো ঘটনা। হুইটসন পৃথিবীর বাইরে কাটিয়েছেন ৬৬৫ দিন যার মধ্যে ২৪৪ দিন তাকে একা কাটাতে হয়েছে যা কি না এর আগে কোনো আমেরিকান বা বিশ্বের কোনো মহিলার দ্বারাই সম্ভব হয় নি।
ঐদিনের ঠিক কয়েক ঘন্টা আগে তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন অতিক্রম করেন। সেখানে ছিলেন আরো একজন আমেরিকান ও রাশিয়ান। রবিবার সূর্যোদয়ের পরপরই তাদের সয়্যুজ (Soyuz) ক্যাপসুল কাজাখস্তানে অবতরণ করে।
মহাকাশ পরিভ্রমণকালে তিনি বেশ কয়েকটি রেকর্ড তৈরি করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী নারী মহাকাশচারী। তার বয়স ৫৭ বছর। আর সবচেয়ে অভিজ্ঞ নারী মহাকাশচারী। আর তিনিই প্রথম নারী যিনি দুইবার মহাকাশ স্টেশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এদিকে নভোচারী ফোডোর ইউর্শিখিন ৫ টি মিশন মিলিয়ে মোট ৬৭৩ দিন অতিবাহিত করে মহাশূণ্যে। নাসা'র নভোচারী জ্যাক ফিশার পৃথিবীতে ফেরেন ১৩৬ দিন মহাকাশে থাকার পর। তিনি গত এপ্রিলে পাড়ি জমিয়েছিলেন। আমরা বাঙালীরা কোথায় পড়ে আছি!
বিদায় মুহূর্তটা খুবই আবেগঘন ছিল হুইটসন, ইউর্শিখিন ও ফিশার'এর জন্য। সয়্যুজ-এ ফেরার সময় তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। শেষবারের মতো সয়্যুজ চালুর পূর্বে ইউর্শিখিন বারবার তার হাত দিয়ে আবেগঘন বিদায়ী ইশারা করছিলেন। মহাকাশ স্টেশনের নতুন কমান্ডার র‌্যান্ডি ব্রেসনিক বলেন, "হুইটসন, ইউর্শিখিন ও ফিশার-এর ১,৪৭৪ দিনের এই মহাকাশ যাত্রাটি একটি বিরল ঘটনা"। তিনি অবাক হয়ে বলেই ফেলেন, ''চার বছর, দুই সপ্তাহ!"
মহাকাশে পাড়ি জমানোর প্রাক্কালে ব্রেসনিক তাদের বলেন, "তোমাদের এই মহৎ ত্যাগের  জন্য আমরা তোমাদের কাছে ঋনী"। তিনি হুইটসনকে "আমেরিকান স্পেস নিন্‌জা" বলে অভিহিত করেন আর তাদেরকে শুভ কামনা জানান। হুইটসন, পেশায় একজন বায়োকেমিস্ট, তিনবার মহাকাশ স্টেশন ভ্রমণেই তিনি দুর্দান্ত কাজ করেন এবং আরো কাজ করতে চান। আরো বৈজ্ঞানিক গবেষণায় রাখতে চান নিজেকে। অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মতে, তাকে দমিয়ে রাখা সত্যিই কঠিন। এমনকি তিনি মহাকাশে থাকাকালে শুকনো খাবার সংরক্ষণ নিয়েও গবেষণা করেছেন।
হুইটসন-এর ফেরার কথা ছিল জুন মাসে, ছয় মাস মহাকাশে কাটিয়ে। কিন্তু সয়্যুজ-এ যখন অতিরিক্ত একটা সুযোগ মিললো, তিনি নিজেকে আরো অতিরিক্ত তিন মাস ভ্রমণের জন্য নিজেকে উজার করে দিলেন। কেবল একটি মিশনে বেশি সময় থাকা আর একজনই আমেরিকান আছেন। তিনি হলেন স্কট কেলি।
মিশন শেষ হবার কয়েক সপ্তাহ আগে হুইটসন বলছিলেন যে তার মিশনের সময় দ্রতই শেষ হয়ে আসছে। তিনি পৃথিবীর পিৎজা খাবার জন্য উন্মুখ হয়ে বসে আছেন। মজা করে আরো বলছিলেন যে পৃথিবীর রেগুলার টয়লেট ব্যবহারের জন্য অপেক্ষার কথা। কারণ, মহাকাশে টয়লেট ব্যবহার পৃথিবীর মতো এতটাও সুবিধাজনক নয়। তিনি তার স্বামীর সাথে দেখা করতেও খুবই আগ্রহী ছিলেন। তার স্বামীও একজন বায়োকেমিস্ট। তিনিও হাউজস্টোন-এ জনসন স্পেস সেন্টারে কাজ করেন।
হারিকেন হার্ভে'র কারণে, অবতরণের সময় নাসা'র লোকজন হাউজস্টোন থেকে কলম্বিয়ায় যেতে পারছিলেন না। তখন ইউরোপিয়ান স্পেজ এজেন্সি হুইটসন ও ফিশারকে জার্মানিতে নেবার প্রস্তাব দেয় যেখানে নাসা'র লোকজন তাদের প্লেন নিয়ে থাকবে মিশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করার জন্য।
রবিবার রাতে তাদের হাউজস্টোনে ফেরার কথা। এদিকে মহাকাশ স্টেশনের বাকী তিনজন ব্রেসনিক, একজন রাশিয়ান ও একজন ইতালিয়ান, তারা আগামী ১২ই সেপ্টেম্বর কাজাখস্তান থেকে দুইজন আমেরিকান ও একজন রাশিয়ানের সাথে একত্রে যোগদান করবে সেখানে।

0 comments:

Post a Comment