PopUp

Monday, September 11, 2017

মধ্যবিত্তর জীবন

মধ্যবিত্তর জীবন
.
নেহার সাথে আমার প্রথম দেখা ঢাবিতে এ্যাডমিশনের সময় নেহা দেখতে আহামরি সুন্দর না হলেও চোখ আর মুখে মায়া মায়া ভাব।ক্লাশ শুরু থেকে সব কিছুতেই হেল্প করতো নেহা আমায়,জানিনা কোন এক অজানায়। নেহা অনেক বিত্তবান একটা পরিবারে জন্ম,আর আমার মধ্যবিত্ত পরিবারে আমি তুর্জ বাবা প্যারালাইসড মা বাসা দেখাশুনা করে সাথে বাবাকেও কোনও রকম টিউশনি করে আমার পড়াশুনা আর পরিবারের খরচ বহন করতে হয়।দিনে দিনে নেহা কেমন জানি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে।আজ নেহা ভার্সিটিতে এলো প্রাইভেট কারে করে গাড়ি থেকে নেমেই নেহা আমার কাছে দৌড়ে এলো।
_এই চলো না দূরে কোথাও ঘুরে আসি।
_নেহা দ্যাখো তোমার আর আমার মধ্যে অনেক তফাৎ।
_কি বাজে কথা বলো
_হ্যাঁ এটাই সত্য যে আমাদের বন্ধুত্বের দূরত্ব রাখা উচিত।
নেহার হাজারও বারনে গেলাম ওর সাথে।
.
একটা পার্কে বসে।
_এই আমার জন্য বাদাম কিনে আনো।
ওর জন্য বাদাম কিনে আনলাম।
_এই নাও খাও।
_আমি খেতে পারবো না তুমি খাইয়ে দাও।
কি করা মেয়েটার পাগলামীতে খাইয়ে দিলাম।অনেক ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরলাম হঠ্যাৎ নেহার ফোন।
_হ্যালো নেহা বলো।
_তুর্জ আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি এই কয়টা দিন তোমায় ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি নাই।
_নেহা তোমার সাথে আমার যায় না প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো।
নেহার হাজারটা নেকামোতে রাজি হয়ে গেলাম।প্রতি ইয়ারে আমাকে হেল্প করতো টাকা পয়সা থেকে সবকিছুতেই এমনকি নেহা আর আমি একই ডিপার্টমেন্টে পড়তাম এমনকি আমাদের সিটটাও পাশাপাশি ছিল।প্রতি বছর নেহাকে আমি এক্সামে হেল্প করতাম।
.
দেখতে দেখতে চারটা ইয়ার পার হয়ে গেল।বিবিএ টা শেষ করলাম হয়তো সেটা একমাত্র নেহারই ক্রেডিট ছিল।নেহার বাসায় সবসময় যেতাম এমনকি সবাই আমাকে চিনতো জানতো,নেহার বাসায় ঠুকতেই দেখি অনেক লোকজন নেহাকে লাল বেনারসি পড়িয়ে বসে রাখা হইছে।
_তুর্জ তুমি হঠ্যাৎ এখানে।
_না মানে এমনি বাসায় এতো লোকজন কেন।
_আমার বিয়ের কথা বার্তা চলছে আজ আমার এংগেঞ্জমেন্ট।
_কি বলো এসব তুমি আমাকে ভালবাসতে আজ এসব কি।
_দ্যাখো তুর্জ তোমার ফ্যামিলি আর আমার ফ্যামিলির মধ্যে অনেক ডিফারেন্স,আর আমি তো তোমাকে ভালবাসি না।
_তো এতো দিন কি সব নাটক ছিল।
_হ্যাঁ ধরে নিতে পারো তাই,তুমি ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলা তাই নিজেকে স্ট্যাবলিস্ট করে গড়ে তোলার জন্য তোমাকে ইউজ করছি সো এখন সরি।
_বাহ নেহা বাহ।
তখনি ওদের বাসা থেকে বের হলাম।
.
তিনদিন পর নেহার ফোন।
_তুর্জ কাল আমার বিয়ে আসবে তো।
_আসবো তোমার জন্য কি গিফট আনবো।
_তোমার যেটা খুশি।
_হুম।
বিয়েতে গেলাম নেহার অনেক সাজিয়েছে চারদিক খুব সুন্দর লাগছে বিশেষ করে নেহাকেও।
_তুর্জ আসছো।
_এই নাও তোমার স্পেশাল গিফট।
_কি এটা।
_পুরুনো একটা ডায়েরি।
_এতে কি আছে।
_খুলে দেখো,ভাল থেকো।
ডায়রিটা খুলতেই চোখে পড়লো ভালবাসা সত্যিই তুচ্ছ হয়তো তোমার কাছে,কিন্তু একটা কথা মনে রেখো টাকা পয়সা দিয়ে সাম্রাজ্য বানানো যায় কখনই সুখ কেনা যায় না।আরও লেখা আছে কবে কখন কিভাবে নেহার সাথে দেখা হয়েছিল।সেই পার্কে বসে বাদাম চিবানো সময় এর কথা,এসব পড়তে পড়তে চোখের কোনে এক ফোটা জল এলো নেহার।বাস্তবতা নির্মম না হয়তো বাস্তবতার পরিহাস নির্মম।
ঘরে শুয়ে শুয়ে তুর্জ ভাবছে মানুষ চেনার মাঝে লজ্বার কিছুই নেই কেননা অমানুষগুলা ঠিক মানুষেরই মতো।মধ্যবিত্তর চাবিকাঠি এমনই আজ আমি ভুলে গেছি কেননা যখনই কাজ শেষে বাড়ি ফিরি মায়ের মুখে এক চিলতে হাসি আর বাবার ছলছল নয়নে হারিয়ে ফেলি নিজেকে।মানুষের জীবনে ভালবাসা বলতে কিছু নেই প্রকৃত ভালবাসা মা বাবারই শ্রেয়।বিল গেটস এর একটা কথা বলেছিল আমি গরীব হয়ে জন্মেছি এটা আমার দোষ না,আমি গরীব হয়ে মরে যাওয়াটা আমার দোষ।
লেখাটা সকল মধ্যবিত্তদের জন্য কেননা কেবল মধ্যবিত্তরাই জানে পৃথীবিটা কতটা নির্মম।

0 comments:

Post a Comment