PopUp

Thursday, September 14, 2017

দারিদ্রতা


>>দারিদ্রতা<<
.
-এইযে হুনছেন মিনু আজ ইলিশ মাছ দিয়া ভাত খাইতে চাইছে।আসার সময় একটা ইলিশ মাছ কিন্না নিয়াইসেন।
>আইচ্ছা,,বলেই রহিম মিয়া রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পরলো।
.
রহিম মিয়ার মুখে কষ্টের ছাপ।কারন সে জানে সারাদিন রিক্সা চালিয়ে যা টাকা রোজগার করে এতে তার নুন আনতে পান্তা ফুরাই।একজন রিক্সা চালকের দিন এর চেয়ে আর কেমন হতে পারে?রহিম মিয়ার তেমন কোনো জায়গা জমি নেই,বাপ দাদার রেখে যাওয়া ভিটেমাটি টুকুই তার শেষ সম্বল।এতেই তার পরিবার নিয়ে থাকে।
.
বড় মেয়ে তুলি ছেলে মন্টু ছোট মেয়ে মিনু আর তার স্ত্রী রহিমা বেগম কে নিয়ে তার পরিবার।
.
মিনু বেশ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ হয়ে পরেছে।মিনুর বয়স তেমন বেশি নয়,মাত্র সাড়ে ছয় বছর বয়স তার।এই অল্প বয়সে মেয়েটি ক্যান্সার নামক ভয়ানক ব্যধিতে আক্রান্ত্র হয়েছে।
.
রহিম মিয়ার ইচ্ছে ছিলো মিনুকে বড় কোনো হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাবেন।কিন্তু তার এই দারিদ্রতার কারনে তার এই অসুস্থ মেয়েটিকে চিকিৎসা করাতে পারেনি।সে চেয়েছিলো তার ভিটে মাটিটুকু বিক্রি করে মেয়েটাকে চিকিৎসা করাতে কিন্তু তাতেও তার মেয়েটির সুস্থ হওয়ার সম্ভবনা নেই উল্টো তার পরিবার নিয়ে পথে নামতে হবে তাই আর সেটা করা হয়নি।
.
এসব ভাবতে ভাবতে সে চলে গেলো রিক্সা নিয়ে।সারাদিন রিক্সা চালিয়ে যে টাকা রোজগার করলো সেটা নিয়ে সে মাছের বাজারে গেলো ইলিশ মাছ কিনতে।
.
>এই যে ভাই, এ মাছ টার দাম কতো?
-ছয়শো পঞ্চাশ টাকা।
>রহিম মিয়ার মনটা ছোট হয়ে গেল।তার সারাদিনের পরিশ্রমের টাকা দিয়ে তো ইলিশ মাছের অর্ধেক দাম ও হয়ে উঠেনি।তাতেও সে ভীরু ভীরু স্বরে বললো,ভাই দুইশো টাকা দিবো।
>যান যান আপনার মাছ খাওয়া লাগবো না,মাছ বিক্রি হওয়ার পর আইসেন মাছের পানি নিয়া যাইয়েন,তাতেই মাছ খাওয়ার স্বাদ মিটে যাবে।
>ভাই আমার অসুস্থ মেয়েটা ইলিশ মাছ খাইতে চাইছে।আমি পরে টাকা টা দিয়া দিমু।
>যান তো।চিল্লাইয়েন না।নুন আনতে পান্তা ফুরায় হেয় আবার ইলিশ মাছ খাইবো।
.
এসব শুনে রহিম মিয়ার বুক কষ্টে হাহাকার করে উঠলো। এতোদিন পর তার মেয়েটা ইলিশমাছ খেতে তাইছে।কিন্তু টাকার অভবে আর দারিদ্রতার কারনে সে ইলিশ মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছে না।
.
চোখ বেয়ে পানি পড়ছে রহিম মিয়ার,চোখ মুছছে আর হাটছে।
>এইযে রহিম চাচা বাকি টাকা টা দিলেন না যে?(রহমত আলী মুদি দোকানদার)
-আর কয়দিন পর দিয়া দিমু বাজান।
>প্রতিদিন ই তো একই কথা কন।টেকা দেওয়ার তো নাম নাই।
-দিয়া দিমু বাজান।রাগ কইরো না।
>হুনেন,মিষ্টি কথায় চিরা ভিজবো না।টাকা দিয়া বাসায় যান।
-রহিম মিয়ার টুপলিতে মেয়ের জন্য ইলিশ মাছ কেনার টাকা দোকানদার কে দিয়া বললো বাবা দুইশো টাকা রাখো।বাকি টাকা টা পরে দিয়া দিমু।
>আইচ্ছা ঠিক আছে,যত্তসব ভিক্ষুকের দল।
.
রহিম মিয়া এ কথা শুনে আরো বেশি কষ্টে বেঙ্গে পরলো।দোকানদারের অপমান আর মিনুর জন্য ইলিশ মাছ কিনতে না পারার হতাশা নিয়ে রাত ১১ টায় বাসায় ফিরলো।
.
রহিম মিয়ার বাসায় ফেরার আওয়াজ পেয়ে মিনু বলে উঠলো মা বাজান আমার লিগা ইলিশ মাছ আনছে মা বাজান ইলিশ মাছ আনছে।
.
রহিম মিয়া মিনুর এ কথা শুনে মিনুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আর ইলিশ মাছ আনতে না পারার আফসোস আর ব্যর্থতার কথা মেয়ে কে বলতে লাগলো।
.
রহিম মিয়া মিনুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে
এতো কষ্ট করার পর ও তার জন্য ইলিশ মাছ আনতে না পারার ব্যার্থ গল্প বলতে লাগলো। গল্প শুনতে শুনতে মিনু তার বাবার কোলে কখন যে চিরতরে ঘুমিয়ে পরলো কেউ বুঝতেই পারলো না।কিরে মা মিনু ঘুমিয়ে গেলি নাকি?বারবার ডাকার পরও কোন জবাব নেই। সবার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে মিনু চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে।এদিকে রহিম মিয়া, রহিমা বেগম আর তার দুই ছেলে মেয়ে মিনুর চলে যাওয়া দেখে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।রহিম মিয়া শোকে পাথর হয়ে গেল আর রহিমা হয়ে গেলো পাগলের মতো।আর তাদের সংসারটা আরো বেশি হাহাকারে ভরে উঠলো।
.
বিঃদ্র:-আমাদের আসেপাশে এমন অনেক পরিবার আছে,রহিম মিয়ার পরিবারের মতো।তারা তাদের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো পূরন করতে পারে না,ছেলে মেয়ের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে পারে না।মিনুর মতো মেয়েগুলো অকালে চলে যায় না ফেরার দেশে।আসুন আমরা তাদের পাশে দাড়াই,তাদেরকে অপমান অবহেলা না করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।

0 comments:

Post a Comment