PopUp

Thursday, September 7, 2017

Bangla Sad Story 001

"ঘুমটা আজ একটু তাড়াতাড়িই ভাঙলো, সারারাতের নিদ্রাহীন ক্লান্ত চোখ দুটোতে একটু ঘুমের রেশ লেগেছিলো শেষরাতে, ভোরের দিকেই সে ঘুম টুটে গেলো। বাইরের পরিবেশটা অদ্ভুত শান্ত। জানালার ফাঁক গলে একটুকরো লালচে সোনালী রং ধারণ করা নীলাকাশটা উঁকি দেয়, যেন 'শুভ সকাল' জানায় আমাকে।
আগে ঘুম ভেঙেই এককাপ বেড টী না হলে চলতো না আমার। এখন অবশ্য চা খেতে পারি না। তাই চুপ করে বিছানায় শুয়ে থেকেই পাখিদের চঞ্চল কিচিরমিচির শুনি।
এখনো ঘুম থেকে উঠেনি কেউ। ওই তো, পাশের বিছানাতেই মা ঘুমিয়ে আছে। জানো মা, সারারাত না ঘুমিয়ে না ঘুমিয়ে তোমার চোখে কাজলকালো দাগ পড়েছে। কিছুদিন পর তো একদম ঘুমাবে না, শুধু কাঁদবে। তাই এখনি তোমার ঘুমানো উচিত। থাক, তোমায় জাগাবো না। বরং আমি আমার ভাবনার ঝুলিটা খুলে বসি।
সেই ছোট্টবেলায় বাবা মায়ের একমাত্র খেলার পুতুল ছিলাম আমি। তাই আদরের কমতি ছিলো না আমার। এখন একটা ছোট ভাইও আছে। তাও আদরের কমতি নেই আমার। বাবা, মা, ভাই, বন্ধু বান্ধব সবাই ভীষণ ভালোবাসে আমায়। আর আমি কী স্বার্থপরের মতো সব ভালোবাসা চুরে করে পালিয়ে যাবার প্ল্যান করেছি!
মা, ও মা, তোমায় শেষবারের মতো জড়িয়ে ধরে গালে আপ্পি দেবো যখন, তখন তুমি কপট বিরক্তিতে 'পাগলি মেয়ে' বলবে না? যখন এটা সেটা খেতে আবদার করবো, তখন মুখে 'না' বলে, লুকিয়ে লুকিয়ে সেটা বানাবার আয়োজন করবেনা? যখন আমি চলে যাবো, তখন এভাবেই ভালোবাসবে তো? একদম কাঁদবে না কিন্তু! জানো তো, কান্না সহ্য হয় না আমার।
বাবা, তুমি কিন্তু অভিনয় একদম পারো না। চোখের জলটা লুকিয়ে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করো, কিন্তু চশমার ফাঁকে তোমার ছলছল করে ওঠা চোখ দুটো আমি ঠিকই দেখি। বাবা, তুমি এত্তো ভুলোমনা কেন? সেই কবে নীল চুড়ি আনতে বলেছিলাম, আর এখনো আনোনি? তাড়াতাড়ি না আনলে আমার আর পরা হবে না যে!
ছোট ভাইয়া, তোর দুষ্টুমি কবে কমবে? দুষ্টুমি করে এখনো আমার মন ভালো রাখতে চাস, তোর এই চেষ্টায় আমার সত্যি হাসি পায়। আমি চলে গেলে কার সাথে এমন করবি রে?
আর টিয়া পাখি, তোর সাথে আমার অনেক রাগ। এমন করে কেউ কাঁদে? এত্ত এত্ত ভালোবাসিস কেন আমায়? তোর দেয়া নীল শাড়িটা পরতে পারিনিরে। হাসপাতালে আমায় সবসময় সবুজ এপ্রন পরিয়ে রাখে। তোর এতো ভালোবাসা হৃদয়ে আর ধরে রাখতে পারবো না রে। হৃদয়ে যে ছিদ্র হয়ে গেছে!
হাসছিস? হাস! তোর হাসিটা যে আমার ভীষণ প্রিয়।
বেঁচে থাকতে খুব ইচ্ছে হয়, জানিস? ইচ্ছে হয়, আবার আগের মতো সবাইকে জ্বালাতে, তোর সাথে আড্ডা দিতে, ফুচকা খেতে, তোর হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে, কিন্তু কিছুই যে আর হবার নয়।
পৃথিবীটা এতো নিষ্ঠুর কেন???"
আর কিছু লেখা নেই ডায়েরীটাতে। পড়তে পড়তে কখন যেন আমার চোখ ভিজে গেছে। আজ দুপুরেই এক সদ্যমৃতা অষ্টাদশী তরুণীর কেবিন পরিষ্কার করতে গিয়ে ডায়েরীটা পেয়ে আমাকে দিয়ে গেছে নার্স। হার্টে ছিদ্র ছিলো মেয়েটার। অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও আমরা বাঁচাতে পারিনি তাকে।
তার লেখা শেষ লাইনটা যেন হাহাকার তুললো আমার বুকে, 'পৃথিবীটা এতো নিষ্ঠুর কেন???'

0 comments:

Post a Comment