PopUp

Sunday, September 10, 2017

গল্পঃ রসায়ন অপ বোন্টি



                                                        গল্পঃ রসায়ন অপ বোন্টি



-----> ভাইয়া ওঠ...
-----> কেন কি হয়ছে সকাল সকাল ডাকছিস কেন...?
-----> আজ অামরা কক্সবাজার যাচ্ছি।
-----> ওমা..! তাই...! অাগে বলবি তো। 
-----> ওক্কে রেডি হ।
.
অামি মুহিব আর যার সাথে কথা বলছিলাম তার নাম মোহনা। আমার ছোট বোন।অামরা দুইজন দুইজনের মত করে নিজেদের পরিবার কে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছি।
.
১০ মিনিট পর....
-----> অামি ঐই সিটে বসবো।
-----> না ঐইটাতে অামি বসবো..
-----> নাহ অামি..!
-----> নাহ.. অামি..
-----> নাহ অামি..
-----> ওক্কে বস তাহলে অামি পিছনে গিয়ে বসি। চকলেট আর অাচার গুলা নিছিলাম সেগুলা একা একা খেতে হবে।
-----> কি..! সত্যিই অাচার নিছস..?
-----> অামি কি তোরে কখনো মিথ্যা বলছি..?
-----> লক্ষি ভাই অামার.. সোনা ভাই অামার অামি তোর পাশে বসবো কেমন...?তুই আর অামি এক সাথে যাবো।
-----> বাহ..! ওক্কে।
.
আমার বোনটা অাচারের পাগলী। অাচারের জন্য সারা দিন মাথা টিপে দিবে সমস্যা নাই । এই জন্য আমি নিজের রুমের অাচার কিনে রেখে দেই যাতে বোনটা দিনে কয়েক বার পায়চারি করে অামার রুমে।
.
ভাবতে ভাবতে পৌছে গেলাম সাগর পাড়ে।অনেক গুলা পিক তুললাম তবু রাজকুমারীর একটায় অাবদার পিক তুলতে হবে।
-----> অামি অার পিক তুলতে পারবো না।
-----> কেন পারবি না।
-----> মন চাইতেছে না।
-----> ওক্কে। আমি তোর অাদরের বোন হলে তুলে দিতি কিন্তু অামি যখন তোর অাদরের বোন নই তাহলে তুলে দিস না।(প্রায় কেদে দিল)
-----> ওলে ওলে অামার বোনটি কান্দে কেন..! একশোটা না হাজারটা পিক তোলে দিব।
-----> সত্যিই দিবা..!
----->হুম। সত্যিই
-----> (ওম্মাহ-----) 
----->এটা কি হলো..?
----->কিছু না। ভাবি দেওয়ার অাগে অামি দিয়ে নিলাম।পরেতো সুযোগ পাবো না।
-----> কানের নিচে দিবো একটা।তোর জায়গা সব সময় তোর জন্য থাকবে। ভুলেও অন্য কথা মুখে অানবি না।-
---->সেটা না হয় পরে দেখবো।
----->ওক্কে। পজিশন নে। পিক তুলি।
ক্রিট...ক্রিট... ক্রিট..........
মেমোরী ফুল। অাগেই যা ভাবছিলাম।
-----> কিরে ভাইয়া দাড়িয়ে থাকবো নাকি..?
-----> তোর মত পেত্নীর পিক তুলবো না।
-----> কী..! আমি পেত্নী ...?
-----> হুম।
-----> পেত্নী ..
----->হুম।
শুরু হয়ে গেল কিল বর্ষণ।এটা কখনো শেষ হবে না। কারণ এটার মাধ্যমে অামাদের ভাই বোনের ভালবাসা বেড়ে যায় হাজার গুন।
.
কিন্তু অামাদের এই অানন্দটা বেশিক্ষন স্থায়ী হয়নি।কারণ গাড়ি করে অাসার সময় এক্সিডেন্টে মারা যায় বাবা-মা।মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে অাসি অামি অার অামার বোন। 
.
কিছু দিনের মধ্যে দুইজনে মিলে বাবার রেখে যাওয়া টাকা গুলো দিয়ে ব্যবসা শুরু করি।বোনটা বাড়িতেই থাকতো। হঠাৎ একদিন অামি অাবার গাড়ি এক্সিডেন্ট করি।অপারেশনের জন্য জমানো সব টাকা খরচ হয়ে যায়।
.
ভিখারী হয়ে যায় অামরা। দুই ভাই বোন না খেয়ে রাস্তায় পাগলের মত হয়ে যেতাম। রাস্তার কুকুরের মত ঘুরতাম কিন্তু কেউ আমাদের সাহায্য করতো না।
.
যারা বলে আমরা মানবতার কাজ করি কিন্তু তারা রাতের অাধারে নিরহ মানুষের ওপ ঝাপিয়ে পড়ে ভোগ করে তাদের দেহ। সেখান থেকে অামার বোনটিও বাদ যায় নি। অামার সামনে বার বার ভোগ করা হয়েছে অামার বোন টিকে।
.
আমরা মানুষ। অামাদের কাজ জীবকে সেবা করা কিন্তু অামরা...! কোন হেটেলে গিয়ে কোন দুর্ভাগা কিছু চাইলে গরম পানি জুটে দিয়।
.
একদিন বোনটাকে সারা দিন খুজে পায় নি। পরের দিন থাকার মত একটা বাসা পেয়ে ছিলাম কিন্তু বোনটার অাচরণ কেমন জানি হয়ে গেল।কিন্তু অাগে তো এমণ করতো না..!
.
তারপর থেকে প্রতিদিন বোনটা রাতে কোথায় চলে যেত বুঝতাম না ভাবতাম হয়তো কোন নাইট গার্মেন্টসে কাজ করে।
.
কিছুদিন পর অামার সেই ঔষুখ টা বেড়ে গেল। বোনটা ভর্তি করিয়ে দিল হাসপাতালে। কিন্তু তখন থেকে বোনের ওপর ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে কারণ আমার এতো অসুস্থতার পরেও বোনটা অামার পাশে থাকতো না কোথায় যেন হারিয়ে যেত। সময় মত এসে টাকা দিয়ে অামার চলে যেত।মনের ক্ষোভ বেড়ে যাওয়ায় ভাল না হয়েও ভাল হওয়ার আভিনয় করে চলে অাসলাম।
.
তারপর আমিও কাজ নি গার্মেন্টেসে।বোনের কাজটা কি করে তার কোন কিছু অনুসন্ধান করতে পারি নি।গরীবের সব কিছু নিয়ে অনুসন্ধান করতে নেই।
.
হঠাৎ আবারো রাস্তায় বসতো হলো কারণ আজ আমার সেই বোনটা মারা গেছে। মায়াবতীটা মারা গেছে।সে মারা যাবার পর বুঝতে পারি সে অামার কাছে কতটা গুরুত্ব পুর্ণ ছিল।
.
এখন অামি পাগল প্রায়। পকেটে টাকা নায় তাই কিছু খেতে পারি না।দোকানদারের ফেলে দেওয়া অবশিষ্ট গুলা খেতে চাইলেও গরম পানি পিঠে পড়ে।হতে হয় তাদের উপহাসের পাত্র।
.
আজ আমি সুইসাইড করবো কারণ আজ আমাকে অামার বোনটা সপ্নে ডেকেছে।খুব অাদর করে ডেকেছে।কিন্তু মরার আগেতো এই পৃথিবীতে স্বার্থপর গুলোদের জন্য কিছু লিখে যেতে হবে। তাই বোনের ডায়রীটা বের কারলাম। ডায়রীটা বের করতেই দেখি অনেক কিছু লেখা।পড়তে শুরু করলাম
.
আজ অামার বাবা ডায়রীটা আমাকে গিফট করেছে অামি অনেক খুশি কারণ বাবা মা ভাই অামাকে তাদের নিজের কলিজা মনে করে। অামি যা চাই তা এনে দেয়।
.
ভাইটা অাজ অামাকে অনেক গুলা অাচার এনে দিয়েছে।ভাইটা অামার খুব দুষ্ট। কখনো সোজা ভাবে কিচ্ছু দেয় না। সব সময় প্রথমে ঝগড়া করবে তারপর গিফট দিবে।
.
আজ অামরা কক্সবাজারে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ অামরা।কারণ কত জন পারে তাদের বাবা মার সাথে বেড়াতে যেতে।
.
আজ আমাদের জন্য কালো একটি অধ্যায় রচনা হলো।কে জানতো অামাদের সুখটা উধাও হয়ে যাবে জীবন থেকে। 
.
তবু ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ঘুরে দাড়াতে পারলাম না। কারণ যে খানে কাজের জন্য গিয়ে ছিলাম সেখানে সবাই অামাকে ভোগ করতে চায় না হলে মোটা অংঙ্কের ভ্যাট দিতে হবে।
.
যখন করার মত কিছু নায় তায় নিজেকে বিলিয়ে দিলাম তাদের মাঝে। খুজে খুঁজে খেল তারা। অাচ্ছা পৃথিবীর কি এতোই নিষ্টুর।
.
তারপর যখন ভাইটা গাড়িটে এক্সিডেন্ট করলো তখন খদ্দরে খুজে টাকা বেশি রোজগার করতে থাকি কারণ ভাইটা আমার জীবনের সব।
.
আজ রক্ত পরিক্ষা করালাম। রক্তে ক্যান্সার হয়েছে। আমি হয়তো আর বেশি দিন বাচবো না। 
.
আমার কিছুতে দু:খ নায় শুধু দু:খ ভাইটা অামাকে অাগের মত অাচার এনে দেয় না। নাস্তা করাতে নিয়ে যায় না। কেমন জানি অামাকে সন্দেহ করে।কি করবো সবই পেটের দায়ে করতে হয়।
.
আজ অামার জীবনের শেষ দিন অাজ অামি মারা যাবো তাই ভাইটার তার স্পেসাল জিনিস রান্না করেছি।ভাইটা আজ খুব খুশি হবে। ওইতো ভাইয়া এসে গেছে.....
.
ডায়রীটা পড়ে মনকে বুঝাতে পারি নি। কি করে কি হলো কারণ বোনটা অামার জন্য এতো কিছু করেছে কিন্তু অামি তাকে ভুল বুঝেছি।
.
বোনটাকে এখনো দেখি নিজের সেই জায়গায়।সারা দিন যেখানে যায় তাকে শুধু মনে পড়ে। নিজেকে ক্ষমা করতে পারতেছি না কারণ তাকে না বুঝে কত খারাপ ভেবেছি।
.
অাসলে সব বোন গুলোই এমণ।কষ্ট পেলেও হাসবে। নিজে ভোগ করবে সব কষ্ট কিন্তু ভাইকে অাচ করতে দিবে না। আচ্ছা সব বোনকি এমণ...! যারা নিজের সব টুকু বিলিয়ে দিয়েও ভাইকে ভালবাসা। অাজ অামি বোনের কাছে হেরে গছি। হেরে গেছি তার নিরসার্থ ভালবাসার কাছে....

0 comments:

Post a Comment